In the Name of Allah, The Most Gracious, Ever Merciful.
Love for All, Hatred for None.
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمـٰنِ الرَّحِيمِ
সৈয়্যদনা হযরত আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.)
লেক ডিষ্ট্রিক, ইউকে
১০ই এপ্রিল, ২০০৯ইং
أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك لـه، وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله. أما بعد فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم*
بسْم الله الرَّحْمَن الرَّحيم * الْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمينَ * الرَّحْمَن الرَّحيم * مَالك يَوْم الدِّين * إيَّاكَ نَعْبُدُ وَإيَّاكَ نَسْتَعينُ * اهْدنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقيمَ * صِرَاط الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْر الْمَغْضُوب عَلَيْهمْ وَلا الضَّالِّينَ (آمين)
উচ্চারণ: আশহাদু আন্ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু আম্মা বা’দু ফাউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইতানির রাজীম। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আর্ রহমানির রাহীম মালিকি ইয়াওমিদ্দিন ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন ইহদিনাসসিরা তাল মুস্তাকীম সিরাতাল্লাযীনা আনআমতা আলাইহীম গাইরিল মাগযুবে আলাইহীম ওয়ালায্ যোয়াল্লীন। (আমীন)
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآَيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যে আয়াতদ্বয় আমি তেলাওয়াত করেছি তার অনুবাদ হচ্ছে,
‘নিশ্চয় আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃজনের মধ্যে এবং রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনের মাঝে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।’
‘যারা দাঁড়িয়ে এবং বসে আর নিজেদের পার্শ্বদেশে (শুয়ে) আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃজন সম্পর্কে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! তুমি এসব কিছু বৃথা সৃষ্টি কর নি। তুমি পবিত্র, অতএব তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব হতে রক্ষা করো।’
(সূরা আল্ ইমরান: ১৯১-১৯২)
এ আয়াত দু’টিতে আল্লাহ্ তা’লা মানুষের কাছে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করার জন্য আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন যে, সবকিছু খোদা তা’লাই সৃষ্টি করেছেন। এই সৃজনের মধ্যে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সবকিছুই অন্তর্ভূক্ত আর মানুষও এই সৃষ্টিরই একটি অংশ। মানুষের কল্যাণের জন্য, তার কাজকর্ম এবং বিশ্রামের জন্য দিন ও রাতের বিধান করেছেন। এক স্থানে বলেছেন, যদি কেবল দিনই হতো আর রাত না আসতো তাহলে তোমাদের অবস্থা কীরূপ হতো? আর রাতই যদি চিরস্থায়ী হতো তাহলে মানুষের অবস্থা কেমন হতো? এসব দেশে, অর্থাৎ পাশ্চাত্যের দেশসমূহে জরিপ চালালে দেখা যাবে, শীতকালে দিন খুবই ছোট হয়ে যায় আর রাত দীর্ঘ হয়। আপনারা দেখে থাকবেন, সাধারণত এ দিনগুলোতে মানসিক চাপ বা বিষাদগ্রস্ত (Depression) রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।
এটি আল্লাহ্ তা’লার পরম অনুগ্রহ যে, তিনি রাত ও সৃষ্টি করেছেন, আর দিনও; দু’টি পৃথক সময় বানিয়েছেন। এতে সামান্য পরিবর্তন এলেই, যেমন ছোট দিন আসলেই যখন আলো কমে যায় তখন এসব দেশে বসবাসকারী এবং এখানকার আবওহাওয়াতে অভ্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের মাঝে বিষন্নতা (Depression) দেখা দেয়।
এটি মানুষের প্রতি আল্লাহ্ তা’লার অনেক বড় একটি অনুকম্পা। এই দিন ও রাত বিভিন্ন ঋতুতে পরিবর্তিত হতে থাকে। কখনও রাত ছোট হয়ে যায় আবার দিন দীর্ঘ থাকে, আবার কখনও দিন ছোট হয়ে যায় আবার রাত দীর্ঘ হয়, অথবা অনেক সময় দিবা-রাত্রির দৈর্ঘ সমান হয়ে থাকে। সুতরাং, মানুষের জন্য আল্লাহ্ তা’লা এই পরিবর্তিত ঋতু এ জন্য সৃষ্টি করেছেন যাতে, এ কারণে সে আল্লাহ্ তা’লার প্রশংসা কীর্তণ করে। অর্থাৎ, খোদার কতো বড় অনুগ্রহ! যদি একই ধরনের জিনিষ বা আবহাওয়া হয় আর কোন পরিবর্তন না আসে, তাহলে মানুষের বিষন্নতায় (Depression) আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। পরিবর্তনশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন যাতে প্রকৃতিতে যে বৈচিত্র রেখেছেন তাও প্রকাশিত হতে থাকে।
যদি আমরা দৃষ্টি দেই তাহলে দেখা যাবে যে, সাধারণত বেশিরভাগ সময় আলো থাকে। বছরে ছোট দিনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম আর বড় দিনের সংখ্যা বেশি। এটিও আল্লাহ্ তা’লার বিরাট অনুগ্রহ। অতএব আল্লাহ্ তা’লা বলেন, বুদ্ধিমান তারাই যারা এই পরিবর্তনশীল ঋতু এবং দিবসের প্রতি দৃষ্টি দেয়। তারপর আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহ স্মরণ করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়। তিনি যেভাবে মানুষের প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন সে মোতাবেক মওসুম বা ঋতুতে বৈচিত্র রেখেছেন। এই দৃষ্টিকোন হতে আমাদের বলেছেন, এই যে পরিবর্তনশীল দিন-রাত এর থেকে এবং আলোকজ্জ্বল দিন হতে মানুষের শিক্ষা গ্রহণ ও আধ্যাত্মিকভাবে উপকৃত হওয়া উচিত।
আল্লাহ্ তা’লার নূর বা সেই জ্যোতি, যা খোদার পক্ষ হতে আসে সেই আধ্যাত্মিক দ্যূতি, যা আল্লাহ্ তা’লা নিজ বিশেষ বান্দাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন তা, থেকে লাভবান হওয়া উচিত। সেসব প্রেরিতদের সন্ধান করা উচিত। তারা যে বার্তা নিয়ে আসেন, আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করে-তাঁর সমীপে বিনত হয়ে অস্বীকারের পরিবর্তে তাঁর সত্যতাকে গ্রহণ করার প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করা প্রয়োজন। এমন কর্মই মানুষকে খোদা এবং তাঁর ইবাদতের প্রতি আকৃষ্ট করে। এবং তাঁর অনুগ্রহ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী মানুষে পরিণত করে।
আমরা সৌভাগ্যবান! কারণ, মহানবী (সা.)-এর দ্বিতীয় আবির্ভাবকে শনাক্ত করে সেই জ্যোতি হতে অংশ লাভ করছি যা এ যুগে আমাদের আত্মিক উন্নতির জন্য আল্লাহ্ তা’লা প্রেরণ করেছেন। কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা বলেন, অংশ লাভ করা এবং কল্যাণ পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র সনাক্ত করা এবং মেনে নেয়াই যথেষ্ট নয়, বরং আল্লাহ্ তা’লার যিক্র (স্মরণ-ইবাদত) একান্ত আবশ্যক। যেমন দ্বিতীয় আয়াতে বলেছেন,
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ অর্থাৎ, যারা দাঁড়িয়ে এবং বসে আর নিজেদের পার্শ্বদেশে (শুয়ে) আল্লাহ্কে স্মরণ করে।
وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ এবং আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃজনের ব্যাপারে চিন্তা করে; কীভাবে আল্লাহ্ তা’লা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।
رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ তারা একথা বলতে বাধ্য হয় যে ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! তুমি এসব কিছু বৃথা ও অকারণে সৃষ���টি কর নি।’ বরং প্রত্যেক সৃষ্টির পিছনে একটি মহৎ উদ্দেশ্য আছে। এই পৃথিবীতে আল্লাহ্ তা’লার যত সৃষ্টি রয়েছে তা বিষাক্ত প্রাণিই হোক না কেন তা সৃষ্টি করারও উদ্দেশ্য আছে। ‘তুমি পবিত্র, অতএব তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব হতে রক্ষা করো।’ আমরা তোমাকে অস্বীকার করে এবং খোদা হিসেবে তোমায় প্রত্যাখ্যান করে কোথাও আগুনের আযাবে না পতিত হই।
আল্লাহ্ তা’লার প্রেরিত পুরুষকে মানার পর দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়, অর্থাৎ এরপর আল্লাহ্ তা’লার যিক্র বা স্মরণের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ হওয়া চাই এবং সদা তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে দেখে হৃদয়ে কৃতজ্ঞতার প্রেরণা সৃষ্টি হওয়া উচিত। যখন যিক্র করা হবে, তখন ইবাদতের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ হবে। আর ইবাদতের প্রতি যখন মনোযোগ নিবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহ্ তা’লার নিদের্শাবলী মেনে চলার প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ হবে। অতএব, এটি এমন একটি বৃত্ত যার সীমানাভূক্ত হয়ে মানুষ সর্বদা নেকী (পুণ্য) ও কৃতজ্ঞতার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ থাকে; নেকীর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, পুণ্যকর্ম করার তৌফিক পায়, এবং কৃতজ্ঞতার প্রেরণায় সমৃদ্ধ থাকে।
যে বান্দা আল্লাহ্ তা’লাকে চিনে বা চেনার চেষ্টা করে, আল্লাহ্ তা’লা আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি অভিনিবেশের ফলে সে বান্দার বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে। এই এলাকায় আমরা অনেক উঁচু পর্বত, গভীর খাদ, জলপ্রপাত, নদী-নালা ও ঝিল দেখতে পাই। লেক ডিস্ট্রিক বলা হয় এ অঞ্চলকে, অনেক ঝিল আছে এখানে। এসবকিছু খোদার অস্তিত্ব প্রকাশ করে। সেসব কিছুর চিত্র তুলে ধরে যা আল্লাহ্ তা’লা আমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যদি আমরা বিশ্ব জগতের নকশা দেখি, দূরবিক্ষণের মাধ্যতে তারা বিশ্বজগতের যে চিত্র ধারণ করেছে, নক্ষত্রপুঞ্জের ভিড়ের মাঝে আমাদের এই পৃথিবী তুচ্ছ ও অতি ক্ষুদ্র একটি বিন্দু বলে পরিদৃষ্ট হয়; বরং লেখা হয় যে, আমাদের পৃথিবী এখানেই কোন স্থানে হবে।
এই পৃথিবীতেই আল্লাহ্ তা’লা এমন অগণিত জিনিষ সৃষ্টি করেছেন মানুষ যদি তা দেখে তাহলে নতুন বলে মনে হয়। কোনো রাস্তায় চলে যান বা কোনো জঙ্গলে চলে যান, কোনো নদীর তীরে দাঁড়ান, কোনো মরুভূমিতে দন্ডায়মান হোন আপনি নতুন আঙ্গিকে খোদা তা’লার কুদরত দেখতে পারবেন। নুতন মহিমায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিকাশ চোখে পড়বে। যা খোদা তা’লার প্রভুত্বের উপর নিশ্চিত বিশ্বাসের জন্ম দেয়। এটিও একজন আহমদীর সাতন্ত্রতা; যুগ ইমামকে শনাক্ত করে এসব জিনিষের প্রতি তার বর্ধিত মনোযোগ নিবদ্ধ হয়েছে। আল্লাহ্ তা’লার সৃষ্টিকৌশলের প্রতি, তাঁর কুদরত ও সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ হবে। পক্ষান্তরে একজন বিখ্যাত কবি আল্লামা ইকবাল আল্লাহ্ তা’লার কাছে অভিযোগের আদলে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন যার শিরোনাম ছিল ‘শিক্ওয়া’ (অভিযোগ নামা):
‘হে আল্লাহ্ তা’লা! আমার কাছে রূপকভাবে ধরা দাও।’
মুসলমান আলেম ছিল এবং অনেক বড় শিক্ষিত ছিল, কিন্তু আল্লাহ তা’লার সৃষ্টিকে দেখেও তাঁকে চিনতে পারেনি। কিন্তু একজন আহমদী নারী, যিনি যুগ ইমামের প্রিয় দুহিতা ছিলেন। তিনি তাঁর ক্রোড়ে শিক্ষা পেয়েছেন এবং এর উত্তর লিখেছেন;
পর্বত শৃঙ্গে আমায় দেখ (গগনচুম্বী পর্বতে আমায় সন্ধান কর) গভীর খাদে আমাকে সন্ধান কর, আমাকে সন্ধান কর ভূমন্ডলের গভীরে। খোদা তা’লার প্রত্যেক সৃষ্টিতেই আমি রূপকভাবে পরিদৃষ্ট হবো। আমার সৃষ্টি দেখে আমার কথা মনে পড়া উচিত।
এ হচ্ছে একজন আহমদীর অনন্য বৈশিষ্ট্য, যে সবকিছু দেখে পূর্বের তুলনায় অধিক আল্লাহ্ তা’লার পরিচয় লাভ করে আর তার ঈমান দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে।
আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, আকাশসমূহ এবং পৃথিবী আমা কতৃক সৃষ্ট। অন্যান্য গ্রহ আমরা কেবল দূর থেকেই দেখেছি, আর বিজ্ঞানীরা স্বীয় জ্ঞান মোতাবেক কিছুটা ধারণা করে এবং ঝাপসা কতক ছবি দেখে এ সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছেন। তবে আমরা এর গভীর জ্ঞান রাখিনা। তবে এই ভূপৃষ্ঠ - যেখানে খোদা তা’লা আমাদের আবাদ করেছেন - এই পৃথিবীতেই আল্লাহ্ তা’লার বিভিন্ন সৃষ্টিশৈলী ও কুদরতের বিস্ময়কর দৃশ্য দেখা যায়। এ হচ্ছে আল্লাহ্ তা’লার মহিমা। অধিকন্তু, যখন আমরা এই আয়াতের প্রতি তাকাই যা সেই যুগে, অর্থাৎ ১৪/১৫ শতাব্দী পূর্বে আরবের মরুভূমিতে এমন একজন মানবের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, পার্থিব জ্ঞান বলতে যাঁর কিছুই ছিল না। কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা স্বীয় জ্ঞানের ভিত্তিতে এটি অবতীর্ণ করে তাঁকে কামেল বা পরিপূর্ণ মানবে পরিণত করেছেন। এরপর, তিনি (সা.) আমাদেরকে অবহিত করেছেন ফলে এটি ইসলাম এবং মহানবী (সা.)-এর সত্যতার উপর আবশ্যকীয় ভাবে এক ঈমানের জন্ম দেয়। আল্লাহ্ তা’লা সেই যুগে-যখন বিজ্ঞান এতোটা উন্নতি করেনি তখন আকাশ ও পৃথিবীর সৃজন সম্বন্ধে বিভিন্ন গুঢ় রহস্য বর্ণনা করেছেন। তারপর আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, এ সৃষ্টি দেখে একজন মানুষ বলে ওঠে,
مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থাৎ, হে খোদা! তুমি এসব কিছু এমন সৃষ্টি করেছ যা মিথ্যা নয় বা বৃথা নয়। অতএব আমাদেরকে কখনও এমন বানিও না যারা একে মিথ্যা বা বৃথা মনে করবে। আর এর ফলে তোমার ইবাদতের ব্যাপারে যেন আমরা ভ্রুক্ষেপহীন না হয়ে পড়ি, যেন তোমার ইবাদত বিমুখ না হই কেননা এর ফলে তোমার শাস্তি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অতএব আমরা যখন কুরআন পাঠ করি, বিজ্ঞান এবং বিভিন্ন সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআনের আয়াতসমূহের প্রতি মনোনিবেশ করি তখন আল্লাহ্ তা’লার প্রতি ঈমান অধিক দৃঢ় হয়। ইসলামের সত্যতা আমাদের সম্মুখে আরো স্পষ্ট হয়। তাই প্রত্যেক আহমদীকে এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। আল্লাহ্ তা’লা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা আমাদের সামনে আল্লাহ্ তা’লার অস্তিত্বের প্রমাণ। যারা বলে, খোদার কোনো অস্তিত্ব নেই, যদি তারা দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তাহলে দেখবে এই পৃথিবীতেই আল্লাহ্ তা’লার অগণিত সৃষ্টি রয়েছে যা আল্লাহ্ তা’লার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে।
হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন,
‘পবিত্র কুরআনে ঐসব লোক যারা বুদ্ধিমতাকে কাজে লাগায় তাদেরকে ‘উলুল আলবাব’ বলা হয়েছে। এরপর বলেছেন الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ। এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা দ্বিতীয় দিক যা বর্ণনা করেছেন তা হলো, ‘উলুল আলবাব’ বা সঠিক জ্ঞান তারাই রাখেন যারা উঠতে-বসতে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর যিক্র করেন। এ ধারণা করা উচিত নয় যে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এমন বিষয় যা অনায়াসে অর্জিত হতে পারে। না, বরং সত্যিকার বিচক্ষণতা ও বুদ্ধি আল্লাহ্ তা’লার প্রতি সমর্পিত হওয়া ছাড়া লাভ হতেই পারে না।’
সঠিক জ্ঞান সেই পায় যে আল্লাহ্ তা’লার প্রতি বিনত হয়। তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। তাঁর সৃষ্টিশৈলী এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি অভিনিবেশ করে। তিনি (আ.) বলেন,
‘এ জন্যই বলা হয়েছে, মু’মিনের দূরদর্শিতাকে ভয় কর।’
মু’মিন অত্যন্ত বিচক্ষণ হয়ে থাকে।
‘কেননা সে ঐশী নূরের আলোকে দেখে থাকে। সত্যিকার বিচক্ষণতা এবং প্রকৃত জ্ঞান যেভাবে এখনই আমি বর্ণনা করেছি কখনই লাভ হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত ত্বাকওয়া না থাকবে। যদি তোমরা সফল হতে চাও, তাহলে বুদ্ধি খাটাও, চিন্তা-ভাবনা কর। অভিনিবেশ এবং চিন্তা-ভাবনা করার জন্য পবিত্র কুরআনে বারংবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ‘কিতাবে মাকনূন’ (প্রচ্ছন্ন কিতাব) এবং পবিত্র কুরআনের প্রতি গভীর মনোনিবেশ করো, পবিত্র স্বভাবের অধিকারী হও। তোমাদের হৃদয় যখন পবিত্র হবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করবে, ত্বাকওয়ার পথে বিচরণ করবে তখন এ দু’টোর সন্ধির ফলে এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ এর ধ্বনি তোমাদের অন্তর হতে নির্গত হবে।’
যখন ত্বাকওয়ার পথে পা পড়বে, বিবেক-বুদ্ধি খাটাবে, আল্লাহ্ তা’লার প্রতি বিনত হবে পবিত্র কুরআনে প্রনিধান করবে, তখনই প্রকৃত অর্থে رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا অর্থ বুঝতে পারবে। তারপর হৃদয় হতে سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ এর দোয়া নির্গত হবে। অর্থাৎ, হে আল্লাহ্! তুমি পবিত্র। আমাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা কর। আমাদের পাপ ক্ষমা কর। আমাদেরকে সর্বদা সেই পথে পরিচালিত কর যা তোমার সন্তুষ্টির পথ। যাতে আমরা আযাব হতে রক্ষা পাই। আগুনের আযাব হতে রক্ষা পাই। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেন,
‘তাহলে তোমাদের অন্তর হতে এই ধ্বনি নির্গত হবে। তখন বুঝতে পারবে যে, এই সৃষ্টি বৃথা নয় বরং তা প্রকৃত স্রষ্টার সত্যতা ও এবং অস্তিত্বের প্রমাণ বহণ করে।’
এ হলো আসল তত্ত্ব। যখন মানুষ এ বিষয়গুলো অনুধাবন করবে তখন আল্লাহ্ তা’লা যিনি প্রকৃত স্রষ্টা, যিনি সৃষ্টির সবকিছুর স্রষ্টা তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট হবে। তিনি (আ.) বলেন,
তখন বুঝতে পারবে যে, এই সৃষ্টি বৃথা নয় বরং প্রকৃত স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। যাতে ধর্মের সহায়ক বিভিন্ন জ্ঞান ও বিজ্ঞান প্রকাশিত হয়।’
এসব জ্ঞান ধর্মের সহায়তার জন্যই দেয়া হয়েছে। এরপর আল্লাহ্ তা’লা মানুষকে যে বুদ্ধি দিয়েছেন তার মাধ্যমেই মানুষ তা অর্জন করে।
আজকে বিজ্ঞানের যে উন্নতি পরিদৃষ্ট হয় আল্লাহ্ তা’লা পূর্বেই এই উন্নতির কথা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন। মানুষ পার্থিব জগতে জ্ঞানের সকল শাখায় উন্নতি করবে। কিন্তু আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য ছাড়া তা সম্ভব নয়। এর প্রতি অভিনিবেশ করলে হবে। বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে বলা হয়, যখন তারা গভীর ভাবে কোন বিষয়ের প্রতি অভিনিবেশ করে করে তখন তাদের উপরও ইলহামী অবস্থার মতোই একটি অবস্থা বিরাজ করে। সেসময় তারা খোদার কাছে প্রার্থনা করুক বা না করুক কিন্তু পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় দ্বারা কোনো জিনিষ পাবার জন্য অবিরাম সাধনা করে; এজন্য তারা অজ্ঞাতসারে আল্লাহ্ তা’লার সাহায্যও কামনা করে। তখন আল্লাহ্ তা’লা তাদের জন্য পথ উন্মুক্ত করেন এবং তাদের নতুন পথ প্রদর্শন করেন।
আল্লাহ্ করুন যাতে আমরা প্রকৃত অর্থে তাঁর ইবাদতকারী হই এবং তাঁর সৃষ্টিজগত দেখে তাঁর সম্পর্কে ভাবতে শিখি। তাঁর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করতে থাকি, আমীন।
প্রাপ্ত সুত্রঃ কেন্দ্রীয় বাংলা ডেস্ক, লন্ডন, ইউকে